প্রেস বিজ্ঞপ্তি
‘ইতিহাস মনস্কতা ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ধারণ সম্ভব নয়’
- ইতিহাস সম্মিলনীর সভায় উপাচার্য ড. হারুন-অর-রশিদ
- ইতিহাস সম্মিলনীর সভায় উপাচার্য ড. হারুন-অর-রশিদ
আজ ২৭ নভেম্বর ২০১৫, শুক্রবার, বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর তৃতীয় বার্ষিক সম্মিলন অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন এর সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ তাঁর ভাষণে বলেন, “বাংলাদেশ হচ্ছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। সুফিবাদ বা মানবতাবাদী ইসলামি জীবন-দর্শন, শ্রীচৈতন্য ও লালনের ভক্তিবাদ আর মহামতি বুদ্ধের শান্তি ও অহিংস বাণী মিলে সৃষ্ট সহিষ্ণু, সংশ্লেষণাত্মক সংস্কৃতি (ঝুহপৎবঃরংঃরপ ঈঁষঃঁৎব) হচ্ছে এর ভিত্তি। আমরা গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি যে, বাঙালির এই শ্বাশত জীবন-আদর্শ বা মূল্যবোধ (ঈড়ৎব ঠধষঁবং)-এর ওপর বার বার আঘাত আসছে। একটি বিশেষ মহল সামাজিক শান্তি, সম্প্রীতি ও ধর্মীয় পারস্পরিক সহনশীলতা ও শ্রদ্ধাবোধ বিনষ্ট করে দীর্ঘ মিথস্ক্রিয়ার প্রক্রিয়ায় গড়ে ওঠা আমাদের কোর ভেল্যুস ধ্বংস করতে উদ্যত।”
মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও শহীদদের স্মৃতিসংরক্ষণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সমাজ-রাষ্ট্রে, অন্য কথায় ইতিহাস নির্মাণে, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বা সাধারণ মানুষের ভূমিকা অপরিসীম। অথচ ঐতিহাসিকভাবেই তারা থেকে যায় উপেক্ষিতÑ ‘আম আদমি’ অথবা ‘নাম-না-জানা’দের দলে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার কথাই ধরা যাক। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ছিল প্রধানত গণযুদ্ধ। কৃষক-মজুর ও তাদের সন্তানদের পাশাপাশি নারী ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তাভুক্তরাও এতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে। এদের সবার ভূমিকা, সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ সম্বন্ধে আমাদের কতটুকুই বা জানা। এ কথা ঠিক যে, বিভিন্ন সময়ে সরকার ও ব্যক্তি উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে গণকবর ও বধ্যভূমি চিহ্নিতকরণ এবং সেখানে স্মৃতিফলক/স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। তবে অনেক গণকবর, বধ্যভূমি এখনো অচিহ্নিত অবস্থায় রয়েছে। আর যেসব চিহ্নিত হয়েছে তার মধ্যে অধিকাংশ স্থানের ফলক/স্তম্ভের লেখা বিবর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। নলিতাবাড়ীর বিধবাপল্লীর বধ্যভূমিতে ভূমি থেকে যৎসামান্য উঁচু ইটের বেষ্টনীর মাঝে একটি স্মৃতিফলকে ৬৯ জন শহীদের নাম, অযতœ-অবহেলায় পড়ে থাকা তথা এর বেহাল অবস্থা দেখে ব্যক্তিগতভাবে আমি খুবই বিস্মিত ও বেদনার্ত হয়েছি। অন্যত্রও অধিকাংশ ক্ষেত্রে অবস্থা অনুরূপ। বিষয়টির প্রতি আমি বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী, বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”
ইতিহাস পাঠের গুরুত্ব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ প্রশাসনকে সুষ্ঠু ও গতিশীল করতে এবং উন্নয়নের ধারাকে এগিয়ে নিতে বর্তমান যুগে তথ্য-প্রযুক্তির আবশ্যকতা অনস্বীকার্য। কিন্তু ইতিহাসমনস্কতা ও মানবিক গুণাবলি সৃষ্টিকারী জ্ঞানের বিভিন্ন শাখার বিকল্প হিসেবে তথ্য-প্রযুক্তি শিক্ষা ও এর অবলম্বন সমাজে এক শ্রেণির রোবট সৃষ্টি করবে মাত্র, যা হবে আমাদের জন্য, মানব সভ্যতার জন্য মারাত্মক বিপর্যয়কর।”
সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সম্মিলনীর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মেসবাহ কামাল। উদ্বোধনী সভায় ইতিহাস সম্মিলনী সদস্য, বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস অনুরাগী শিক্ষক, গবেষক ও লেখকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সম্মিলনীর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মেসবাহ কামাল। উদ্বোধনী সভায় ইতিহাস সম্মিলনী সদস্য, বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস অনুরাগী শিক্ষক, গবেষক ও লেখকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন